শপিং মলে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি বিধি-নিষেধের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া হয়েছে শপিং মল। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। শপিং মল খুলে দেওয়ার পর প্রথম শুক্রবার ছিল গতকাল। সাধারণ ছুটির দিনে গতকাল রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ শপিং মল বসুন্ধরা

সিটি ছিল ঈদ কেনাকাটায় ভীষণ ব্যস্ত। পছন্দের নতুন জামা, জুতা, অলংকার আর প্রসাধনসামগ্রী কিনতে ক্রেতাসাধারণ ছুটে এসেছিল বসুন্ধরা শপিং মলে।

গতকাল দুপুর ২টার দিকে সরেজমিনে বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাসাধারণের সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার লম্বা লাইন। মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা এই শপিং মলে প্রবেশের সময় নিশ্চিত করছেন স্বাস্থ্যবিধি। শপিং মলে প্রবেশের পরও নিরাপত্তাকর্মীর চোখে যদি পড়ে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের কোনো দৃশ্য, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে সচেতন করে দিচ্ছেন।

শপিং মলটির ভেতরে বিভিন্ন লেভেলে গিয়ে দেখা গেছে, মূলত পোশাক এবং জুতার দোকানে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড়। তুলনামূলক কম ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের দোকানগুলোয়। আর অলংকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত চার-পাঁচ দিনের তুলনায় গতকাল তাঁদের বিক্রি ছিল ভালো। সদ্য বিবাহিত বৃষ্টি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে কেনাকাটা করতে আসতে তো হতোই। নতুন বিয়ে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনলাম।’

বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নিশাত-রবিন দম্পতি এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। জানালেন, কেনাকাটা করতে তাঁদের প্রথম পছন্দ বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বসুন্ধরা সিটিতে বাড়তে থাকে ক্রেতার ভিড়। সঙ্গে বেচাবিক্রিও। কমপ্লেক্সটির পার্কিংয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কেনাকাটা করতে আসা মানুষের গাড়িতে পার্কিং প্রায় পূর্ণ।

অন্যদিকে, রাজধানীর আরেক শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েও দেখা গেছে নানা বয়সী মানুষের ব্যাপক ভিড়। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষের আনাগোনা ছিল এই শপিং মলে। জনপ্রিয় পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর শোরুমে পা ফেলার জায়গা ছিল না। দেশীয় ব্র্যান্ড আড়ংয়ে লম্বা লাইন ধরে ক্রেতাদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ২০-৬০% ডিস্কাউন্ট অফার। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বাইরে অন্য দোকানগুলোতেও নানা ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

ঈদে পোশাকের বৈচিত্র্য কেমন জানতে চাইলে বনানী থেকে আসা বাপ্পী ও উষা বলেন, এবার কালেকশন অনেক বেশি। তবে নতুনত্ব কম। কিছু ব্র্যান্ডের দোকানে কালেকশন বেশ ভালো। তবে বেশির ভাগ শপে ডিজাইন গত বছরের মতো।

করোনা মহামারি বিবেচনায় রেখে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজ, তাপমাত্রা মাপা ও মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে।

মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগণের পাশে শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশের কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের এই দুঃসময়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই মারাত্মক ভাইরাস আক্রমণের বিরূপ প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখের অধিক পরিবারকে পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী নববর্ষের প্রাক্কালে দেয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, তাঁর সরকার জনগণের পাশে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ লক্ষ্যে আগামী ২ মে (রোববার) প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা বিতরণের দ্বিতীয় পর্ব চালু করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব।

সচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পরিবারকে আগামী ২মে থেকে ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার ফান্ড (ইএফটি)’র মাধ্যমে সরাসরি অর্থ সহায়তা প্রেরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।’

তিনি বলেন, মারাত্মক করোনাভাইরাস নতুন করে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ‘জি টু পি’ (সরকার থেকে ব্যক্তি) পদ্ধতিতে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে নগদ সহায়তা বিতরণ করা হবে।

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন, যেখানে প্রতিটি পরিবার ২,৫০০ টাকা পাবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে একদল সংবাদকর্মীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘বর্তমান লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মানবিক সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। অস্থায়ী কর্মহীন, স্বল্প আয়ের, নিঃস্ব ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষসহ সারাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী এই সহায়তা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সচিব বলেন, লকডাউনের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ এবং দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি উপার্জনকারীদের অসুবিধা হ্রাস করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশে ৫শ ৯০ কোটি টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে।

এ ছাড়াও তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চলমান লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও ভাসমান লোকদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সমস্ত জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ইতোমধ্যে তাঁর ‘ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে ১০ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছেন।

গত বছরের গোড়ার দিকে, যখন কোভিড-১৯ এর প্রথম তরঙ্গ দেশে আঘাত হানে, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে সাড়ে ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবার এবং দুর্বল গোষ্ঠীগুলোকে পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করেছিলেন।